Breaking News

উঁচুমানের ডিজিটাল প্লাটফর্ম তৈরি করল হাইআতুল উলইয়া- ‘এইচইএমএস’

উঁচুমানের ডিজিটাল প্লাটফর্ম তৈরি করল হাইআতুল উলইয়া- 'এইচইএমএস'

দেশের হাজারো কওমি মাদরাসার সরকার স্বীকৃত সর্বোচ্চ অথরিটি ‘আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’। ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল এই বোর্ডের অধীনে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে (ইসলামী শিক্ষা ও আরবি) মাস্টার্সের সমমান মর্যাদা প্রদান করে।

বর্তমানে কওমি মাদরাসাভিত্তিক ৬ টি বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশের ২২৪৮ টি দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত কওমি মাদরাসা সংস্থাটির অধীনে নিবন্ধিত। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত শিক্ষাবর্ষগুলোতে এ সকল মাদরাসা থেকে ১৭১৬৬৪ জন শিক্ষার্থী দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষা দিয়েছেন।

সারাদেশে ২৩০ টি পরীক্ষাকেন্দ্রে মোট নেগরানের সংখ্যা ১১৯২ জন এবং পরীক্ষা শেষে খাতা দেখার কাজ করেন ৯৪৭ জন মুমতাহিন। তবে প্রতিবছর মাদরাসা, মারকাজ (পরীক্ষাকেন্দ্র), নেগরান (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক) ও মুমতাহিনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ সকল শিক্ষার্থীদের উন্নত ও ডিজিটাল শিক্ষা সেবা প্রদানের জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে হাইআতুল উলইয়া। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিক্ষাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে সংস্থাটি তৈরি করেছে ‘হাইআতুল উলয়া এক্সাম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এইচইএমএস)’।

হাইআতুল উলইয়া সূত্রে জানা গেছে, দেশের অন্যতম ওয়েব ডেভোলপার প্রতিষ্ঠান ডাইনামিক সল্যুশন ইনোভেটরস লিমিটেড হাইআতুল উলয়া এক্সাম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এইচইএমএস) তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ৬০ লক্ষ টাকার চুক্তি করে হাইআতুল উলয়া।

তাছাড়া এই প্লাটফর্ম পরিচালনা ও শিক্ষার্র্থীদের যাবতীয় তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সার্ভাররুমও স্থাপন করেছে হাইআতুল উলইয়া। সার্বক্ষনিক মনিটরের জন্য রয়েছে একাধিক জনবল।

প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি এ প্লাটফর্মের মাধ্যমে সারাদেশের কওমি শিক্ষার্থীদের দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষার বিভিন্ন প্রক্রিয়া যেমন শিক্ষার্থী নিবন্ধন, ফর্ম পূরণ, কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, প্রশ্ন প্রস্তুতি ও বিতরণ, প্রবেশপত্র প্রদান, স্ক্রিপ্ট বিতরণ এবং সংগ্রহ, সিলেবাস ম্যানেজমেন্ট, ইনভিজিলেশন, পরীক্ষার উপস্থিতি গ্রহণ, ফলাফল প্রদান এবং প্রকাশ, এবং সার্টিফিকেট ইস্যু করা ইত্যাদি এইচইএমস অ্যাপ্লিকেশনের বিভিন্ন মডিউলের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে।

এছাড়াও এইচইএমস প্লাটফর্মে রয়েছে শক্তিশালী রিপোর্ট লাইব্রেরি এবং বিজনেস ইন্টেলিজেন্স ড্যাশবোর্ড যাতে সেশনভিত্তিক পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স, পরীক্ষার ফলাফল, মাদরাসার পারফরম্যান্সের সূচক, কেন্দ্র পরিচালনা সংক্রান্ত একাধিক রিপোর্ট রয়েছে এতে। সংস্তাটির মতে, এই রিপোর্টগুলো দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষার মান উন্নয়ন এবং প্রমিতকরণে ডাটাভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

এছাড়াও পরীক্ষার্থীর ফলাফল, মাদরাসারওয়ারি ফলাফল, সনদ প্রাপ্তির আবেদন এবং যাচাইকরণ, সনদপত্র ভেরিফিকেশন, সনদ ট্র্যাক, সাময়িক সনদের আবেদন, মূল সনদের জন্য তথ্য প্রদান, অনলাইনে মাদরাসার নাম দাখিল ইত্যাদি সেবাও এইচইএমএস থেকে পাবেন কওমি মাদরাসার লাখো শিক্ষার্থী।

এইচইএমস প্ল্যাটফর্মের অংশ হিসেবে একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপ করা হয়েছে যাতে নেগরান এবং মুমতাহিনের নিয়মিত কার্যক্রমের বেশ কিছু অংশ ফিচার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা তাদের কাজকে আরো সহজ করে তুলবে।

অ্যাপটি ব্যবহার করে নেগরানগণ পরীক্ষার্থীর রোল নম্বর অথবা খাতার কিউআর কোড স্ক্যান করে সরাসরি পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতি গ্রহণ করতে পারবেন এবং নেগরানের নিজের উপস্থিতি প্রদান করতে পারবেন।

এছাড়াও অ্যাপটিতে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর এন্ট্রি এবং মুমতাহিন কর্তৃক কিউআর কোড স্ক্যান করে উত্তরপত্রের প্রাপ্ত নম্বর সরাসরি সিস্টেমে এন্ট্রি করার সুযোগ রয়েছে। অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যাবে।

হাইআতুল উলইয়ার অফিস ব্যবস্থাপক মাওলানা অসিউর রহমান আওয়ার ইসলামকে বলেন, দেশব্যাপী ৬টি কওমি মাদরাসা বোর্ড এবং বিভিন্ন বোর্ড ও নিবন্ধিত মাদরাসাগুলোর মধ্যে সমন্বয়সাধনের মাধ্যমে এই প্ল্যাটফর্মটি দাওরায়ে হাদীস (তাকমীল) পরীক্ষার সনদের গ্রহণযোগ্যতা এবং সর্বোপরি কওমি মাদরাসার শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিনি জানান, প্রতিটি মাদরাসায় একজন করে এডমিন রয়েছে। মাদরাসার এই এডমিন শিক্ষার্থীদের যাবতীয় তথ্য প্রতিনিয়িত আপডেট রাখছে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে, পরীক্ষার সময় নানামুখী সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে, অনলাইনে সনদের যাবতীয় কাজ করা যাচ্ছে। এছাড়া আগামী বছর থেকেই পরীক্ষার ফিও অনলাইনে প্রদান করতে পারবে শিক্ষার্থীরা।

Leave a Reply